দেশে ৭৬ বছরের মধ্যে রেকর্ডভাঙা তাপপ্রবাহ

রাজধানীর মণিপুরিপাড়ায় আবু সাঈদের ইস্তিরির দোকানে কাপড়ের স্তূপ। ফার্মগেট থেকে যে সড়ক বিজয় সরণি গেছে, তার পাশের মার্কেটে এই দোকান। কিন্তু কাজ বন্ধ রেখে দোকানের বাইরে গিয়ে জিরোচ্ছিলেন সাঈদ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই দোকানির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। এত কাপড় ফেলে রেখে কেন দীর্ঘ সময় বাইরে আছেন—জিজ্ঞাসা করায় আবু সাঈদ কারণ হিসেবে জানালেন, তাঁর একজন সহকারী ছিল। সে দুই দিন আগে কিছু না বলে দোকান থেকে চলে যায়। কারণ জিজ্ঞাসা করায় ছেলেটি বলে, এই গরমে সে ইস্তিরির দোকানে কাজ করবে না। তাই গ্রামে চলে গেছে। একা একা কাজ করতে দেরি হচ্ছে বলেই কাপড় জমা হয়েছে বিস্তর। আবু সাঈদ বলছিলেন, ‘এই গরমে টিকতে পারতেছি না। কারেন্ট যায় না তেমন। ফ্যানও ঘুরতেছে। কিন্তু গরম কমে না। কাজকর্ম বিরক্তিকর মনে হইতেছে। কখন যে বৃষ্টি আইব।’

কখন যে বৃষ্টি হবে—এমন হাপিত্যেশ আজ দেশজুড়েই বলা যায়। কারণ আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এবার এই এপ্রিল মাসে টানা যত দিন তাপপ্রবাহ হয়েছে, তা গত ৭৬ বছরে হয়নি। গত বছর (২০২৩) একটানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ হয়েছিল। এবার তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে। আজ শুক্রবার ২৬ এপ্রিল, আজও তাপপ্রবাহ বইছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে ১৯৮১ সাল থেকে সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহের উপাত্ত আছে। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর আগে ২০১০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ২০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল, তবে তা টানা ছিল না। কিন্তু এবার টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহ হলো। আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এমন প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের পেছনে চারটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন। এবারের অতি তাপের কারণে এবার অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প জমা হচ্ছে। আর তাতে চলতি বছর অতিবৃষ্টি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

১৯৪৮ সাল থেকে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এবারের মতো তাপপ্রবাহ টানা আগে হয়নি। বলা যায়, ৭৬ বছরের রেকর্ড এবার ভেঙে গেল।

মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক, আবহাওয়াবিদ, আবহাওয়া অধিদপ্তর

বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক আইনুন নিশাত আজ প্রথম আলোকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার যে মূল বৈশিষ্ট্য দেখা গিয়েছে, সেটা হলো অনিশ্চয়তা। প্রকৃতি কখন কীভাবে আচরণ করবে, তার ছন্দটাই নষ্ট হয়ে গেছে বা যাওয়ার পথে। এবার এত গরম হয়তো পরে দেখা যাবে, গরম একদম কমে গেছে। এই বিরূপ প্রকৃতিকে মোকাবিলা করাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।